যে কারণে বৈধ হলো রেকর্ড পরিমাণ কালো টাকা
বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর বলছে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত আয় প্রায় সাড়ে নয়শ কোটি টাকা কর দিয়ে বৈধ করেছেন সাত হাজার ৪৪৫ জন করদাতা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
কারণ পুরো অর্থবছরেও কখনো এত বিপুল পরিমাণ টাকা সাদা করার উদাহরণ নেই।
অর্থবছরের নিয়মিত আয়কর আদায়ের স্বাভাবিক যে লক্ষ্যমাত্রা সেটি করোনা মহামারির কারণে অর্জিত হবে কি-না তানিয়ে অনেকেই সন্দিহান হলেও এর মধ্যেই কালো টাকা সাদা করার রেকর্ড ভঙ্গ হলো যাতে সরকারের রাজস্ব ভাণ্ডারে যোগ হলো প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।
এর আগে এতো বিপুল পরিমাণ কালো টাকা একসঙ্গে অর্থনীতির মূল স্রোতে আসেনি। অর্থমন্ত্রী যে সুযোগ দিয়েছেন, তা নেওয়ার জন্য আরো ছয় মাস সময় হাতে রয়েছে। কী কারণে মাত্র ছয় মাসেই এতো বিপুল পরিমাণ কালো টাকা বৈধ হয়েছে, সে প্রশ্ন অনেকের।
অতীতে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ থাকলেও প্রযোজ্য কর দিয়ে এর উপর আরো ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হতো। গত অর্থবছর পর্যন্ত ব্যক্তি করদাতাদের করহার ছিল ১০ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। কেউ এক কোটি টাকা বৈধ করতে চাইলে এর বেশিরভাগের উপরই ৩০ শতাংশ আয়কর প্রযোজ্য হতো। প্রদেয় করের ওপর আরো ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হতো। ফলে যারা নিয়ম মেনে কর দিতেন, কালো টাকা বৈধ করতে হলে তাদের চেয়ে কিছু হলেও বেশি দিতে হতো। কিন্তু এবার আইন হয়েছে, জরিমানা তো নয়ই। সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ করও নয়। মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়েই যেকোনো টাকা (এমনকি নগদ কিংবা ব্যাংক জমা) বৈধ করা যাবে। এটি কালো টাকা বৈধ হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর চেয়ে বড় কারণ হলো, অতীতে কর দিয়ে টাকা বৈধ করা হলে ওই টাকার উৎস নিয়ে আয়কর বিভাগ কেবল প্রশ্ন তুলতো না। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কিংবা অন্য কোনো গোয়েন্দা সংস্থা চাইলে এ বিষয়ে খোঁজ খবর করতে পারতো। ফলে কর বিভাগ সুযোগ দেওয়া সত্ত্বেও দুদকের ভয়ে অনেকে টাকা বৈধ করতে আগ্রহী হতেন না। এবার এনবিআর তো নয়ই, অন্য কোন সংস্থারও এসব অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে। অর্থাৎ এই টাকা কোথা থেকে এসেছে, এ প্রশ্ন কেউ তুলতে পারবে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত এ দুটি কারণেই এবার এতো বেশি পরিমাণে কালো টাকা বৈধ হয়েছে। আগামী ছয় মাসেও একইভাবে বিপুল পরিমাণ টাকা অর্থনীতির মূল স্রোতে আসবে বলেও মনে করা হচ্ছে।